বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
মাত্র চার মাস আগে বরিশালের বানারীপাড়ার রাকিবের (২১) সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলীর জান্নাতের (১৮)। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গার্মেন্টসকর্মী রাকিবকে নিয়ে ভাড়া বাসায় সুখের ঘর বেঁধেছিলেন মা-বাবাহারা এতিম জান্নাত। দুই হাতের মেহেদির রং মুছে যাওয়ার আগেই বিধবা হয়ে গেলেন এ তরুণী।
জানা যায়, রাকিব ২১ জুলাই সকালে ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকার বাসা থেকে বাজার করতে বের হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেদিন দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে বাবা মোশারেফ হোসেন ছেলে রাকিবের লাশ শনাক্ত করেন। ওই দিন রাতেই বানারীপাড়ার সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। ২২ জুলাই সকাল ১০টায় বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন রাকিব । দিনমজুর বাবা, মা হার্টের রোগী, প্রতিবন্ধী বড় ভাই শাকিল ও নবপরিণীতা স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে ফতুল্লায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি।
বানারীপাড়ার জম্বদ্বীপ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাকিবদের কোনো ঘর নেই। ভাঙা একটি ঘরে বসবাস করছেন তার চাচা নুরুল হক। ছেলে রাকিবের মরদেহ নিয়ে মোশারেফ হোসেন ও তার পরিবার বাড়িতে এসে ঠাঁই নিয়েছেন সেই ঘরে। শোকে পাথর হয়ে যাওয়া রাকিবের মা রাশিদা বেগম বিলাপ করে বলেন, বাড়িতে ঘর নির্মাণ করে তাদের (মা-বাবা) বাড়িতে রাখার স্বপ্ন ছিল ছেলের। বুলেটের আঘাতে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। নানির কাছে বেড়ে ওঠা অসহায়, এতিম মেয়েটিকে ছেলের বউ করেছিলাম। চোখের সামনে সেই বউটা আজ বিধবা। ওর দিকে তাকাতে পারি না।
শোকে স্তব্ধ দিনমজুর মোশারেফ হোসেন বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে পৃথিবীতে মনে হয় ভারী আর কিছু নেই। জানি না কিভাবে এই শোক সইব। সবার কাছে ছেলের জন্য দোয়া চাই।
স্বামীকে হারিয়ে জান্নাতের দুচোখে কেবলই কান্নার স্রোত। ভারী কণ্ঠে তিনি বলেন, মা-বাবা নেই ,স্বামী রাকিবকে ঘিরে নানা স্বপ্নের জাল বুনতাম, ওকে আঁকড়ে ধরে সুন্দরভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম। ভাগ্য এবারও আমার সঙ্গে প্রবঞ্চনা করল ! পোড়া কপাল আমার। পৃথিবীতে মনে হয় শুধু স্বজন হারানোর কষ্ট পাওয়ার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata